পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি। সদ্য স্বাধীন দেশের গর্ব হিসেবে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানটি শুরুতেই নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে—প্রযুক্তিগত অপ্রতুলতা, দক্ষ জনবলের অভাব ও যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো ছিল প্রধান চ্যালেঞ্জ।
তারপরও আশা ছাড়েননি বিমান কর্মকর্তারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উড়োজাহাজ যুক্ত হয়েছে বহরে, চালু হয়েছে নতুন রুট। ঢাকা-লন্ডন, ঢাকা-নিউইয়র্ক, ঢাকা-কানাডা—বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যগুলোতে দেশের পতাকা বহন করে চলেছে বিমান। বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে বহরে, যার মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার।
তবে শুধুই উন্নতির গল্প নয়। একাধিক দুর্ঘটনা, রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি, দুর্নীতি ও পরিকল্পনার অভাব বিমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে বহুবার। বিশেষ করে ১৯৮৪ ও ২০০৭ সালের বড় ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিষ্ঠানকে নাকাল করে তোলে। এ ছাড়া কিছু মহলের ষড়যন্ত্র, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বিমানকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য থেকে পিছিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা।
তবু হাল ছাড়েননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এডিটরস মেইলকে বলেন বিমানের এক সাবেক পাইলট, “আমরা জানতাম, একদিন বিমান আবারও আকাশে ভরসার নাম হবে। দিনরাত খেটে সেই স্বপ্নটাকেই সত্যি করতে চেয়েছি।”
বর্তমানে বিমান আন্তর্জাতিক রুট ছাড়াও ঢাকা থেকে কক্সবাজার, সৈয়দপুর, যশোরসহ অভ্যন্তরীণ রুটেও নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। নতুন রুট খোলার পরিকল্পনা চলছে আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ার দিকে।
অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাল টিকিটিং, এবং কর্মী প্রশিক্ষণে জোর দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে চূড়ান্ত সাফল্য পেতে হলে বিমানকে পেশাদার ব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নীতি এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে আরও দক্ষতা দেখাতে হবে—মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একটি সময় যাকে “লস প্রজেক্ট” বলা হতো, সেই বিমানই আজ আবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে—বাংলাদেশের আকাশপথে সোনালী সম্ভাবনার।